Last Updated on December 26, 2022 by বাংলা মাস্টার
সাম্রাজ্যবাদ ও উপনিবেশিকতাবাদের প্রসারের কারণ আলোচনা কর
ভূমিকা
সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলির ঔপনিবেশিক সম্প্রসারণের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল নিজেদের রাজনৈতিক আধিপত্যের প্রসার ঘটানো। তবে কোনো একটি অভিমত সাম্রাজ্যবাদী সম্প্রসারণের কারণ ব্যাখ্যার জন্য যথেষ্ট নয়। এর জন্য বিভিন্ন কারণকেই দায়ী করা যায়।
রাজনৈতিক কারণ
[১] উগ্র জাতীয়তাবাদ
১৮৭০ খ্রিস্টাব্দের পর ইউরোপের বিভিন্ন দেশে উগ্র জাতীয়তাবাদ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। প্রতিটি জাতিই নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরু করে। এই পরিস্থিতিতে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ এশিয়া ও আফ্রিকার অনুন্নত দেশগুলিতে উপনিবেশ প্রতিষ্ঠা করে নিজেদের শক্তিবৃদ্ধির চেষ্টা চালায়।
[২] ক্ষমতার আকাঙ্ক্ষা
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সম্মান প্রতিপত্তি ও ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ইউরোপের দেশ উপনিবেশ প্রতিষ্ঠায় অগ্রসর হয়।
অর্থনৈতিক কারণ
[৩] পণ্য বিক্রির বাজার ও কাঁচামাল সংগ্রহ
শিল্পবিপ্লব ইউরোপের অর্থনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটায়। কলকারখানায় বিপুল পরিমাণ পণ্য উৎপাদিত হতে থাকে। উদবৃত্ত পণ্য বিক্রির জন্য ইউরোপের দেশগুলি এশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন অনুন্নত দেশের বাজার দখলের চেষ্টা চালায়।
কারখানাগুলিতে এই বিপুল পরিমাণ কঁচামালের জোগান বজায় রাখতে কাঁচামাল সংগ্রহের জন্য ইউরোপের শিল্পোন্নত দেশগুলি সুকৌশলে এশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল করে সেখানে নিজেদের ঔপনিবেশিক শাসন প্রতিষ্ঠা করে।
[৪] শ্রমিক সংগ্রহ
ইউরোপের কলকারখানাগুলিতে কায়িক শ্রমদানের জন্য সস্তায় প্রচুর সংখ্যক শ্রমিকের প্রয়োজন ছিল। ইউরোপের শিল্পোন্নত দেশগুলি ইউরোপের বাইরে বিভিন্ন দেশে ঔপনিবেশিক শাসন থেকে সস্তায় প্রচুর শ্রমিকের জোগান অব্যাহত রাখার উদ্যোগ নেওয়া হত।
সামাজিক কারণ
[৫] জনসংখ্যা বৃদ্ধি
ঊনবিংশ শতকের শেষদিকে ইউরোপের প্রায় প্রতিটি দেশেই জনসংখ্যা বিপুলভাবে বৃদ্ধি পায়। অতিরিক্ত জনসংখ্যার জন্য বাসস্থান এবং কর্মসংস্থান মুশকিল হয়ে পড়ে। এই পরিস্থিতিতে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ এশিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশের বিভিন্ন দেশে উপনিবেশ প্রতিষ্ঠা করে সেখানে তাদের বাড়তি লোকজনের বাসস্থান ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার উদ্যোগ নেয়।
[৬] সভ্যতার প্রসার
ইউরোপের কোনো কোনো সাম্রাজ্যবাদী চিন্তাবিদ মনে করতেন এশিয়া ও আফ্রিকার অনুন্নত মানুষদের প্রতি ইউরোপের ‘সাদা চামড়ার মানুষ’দের কিছু দায়বদ্ধতা আছে। তাঁরা মনে করতেন যে, অনুন্নত জাতিগুলিকে সভ্য করে তোলা উন্নত জাতিগুলির দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।
সামরিক কারণ
ইউরোপের বিভিন্ন দেশের মধ্যে পারস্পরিক সন্দেহ বৃদ্ধি পায়। এর ফলে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ নিরাপত্তার অভাব বোধ করতে থাকে। নিজ দেশের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন ইউরোপীয় রাষ্ট্র পৃথিবীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সামরিক ও নৌঘাঁটি স্থাপন করতে থাকে। পাশাপাশি বিভিন্ন দেশ নিজেদের সামরিক শক্তি বৃদ্ধির জন্যেও উপনিবেশ গড়ে তুলেছিল।
ধর্মীয় কারণ
ইউরোপের খ্রিস্টান ধর্মপ্রচারকগণ এশিয়া ও আফ্রিকার অনুন্নত দেশগুলিতে খ্রিস্টধর্ম প্রচার করে অন্ধকারাচ্ছন্ন জাতিগুলিকে আলোর জগতে আনার উদ্যোগ নেয়। ধর্মপ্রচারের পাশাপাশি মানব কল্যাণ এবং নিপীড়িত জনগণের মঙ্গলসাধনের উদ্দেশ্যে এশিয়া ও আফ্রিকার অনুন্নত দেশগুলিতে ধর্মপ্রচারকরা যাত্রা করে।
প্রযুক্তিগত কারণ
উন্নত পরিবহন ব্যবস্থা, যন্ত্রচালিত যান ইউরোপীয় অভিযাত্রীদের অভিযান স্পৃহা নিঃসন্দেহে বৃদ্ধি করেছিল। উন্নত প্রযুক্তিতে গড়ে ওঠা নৌসংগঠনগুলি উপনিবেশ দখলের জন্য সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করত।
উপসংহার
এশিয়া, আফ্রিকা, আমেরিকার বিভিন্ন অঞ্চলে উপনিবেশ প্রতিষ্ঠা করে সেখানে অর্থনৈতিক শোষণ ও লুন্ঠন চালায়। কিন্তু সময়ের সঙ্গে এইসব অধিকৃত অঞ্চলগুলি স্বাধীনতা লাভ করতে শুরু করে। ১৯৯৯ সালে পোর্তুগাল ‘ম্যাকা চিন’কে ছেড়ে দিলে ঔপনিবেশিক শাসনের অবসান ঘটে।