Menu

১৯০৯ সালের মর্লে-মিন্টো শাসন সংস্কার আইনের বিভিন্ন দিক উল্লেখ কর এই আইনের ত্রুটি উল্লেখ কর

Last Update : January 10, 2023

১৯০৯ সালের মর্লে-মিন্টো শাসন সংস্কার আইনের বিভিন্ন দিক উল্লেখ কর এই আইনের ত্রুটি উল্লেখ কর

ভূমিকা—ঔপনিবেশিক শাসনে ব্রিটিশদের বিভিন্ন সংস্কারমূলক আইন ভারতীয়দের সন্তুষ্ট করতে পারেনি। তাই এমন পরিস্থিতিতে ব্রিটিশ সরকার ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে মর্লে-মিন্টো শাসন সংস্কার নামে একটি নতুন আইন প্রবর্তন করে।

আইন প্রবর্তনের কারণ

১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে ভারতে মর্লে-মিন্টো সংস্কার আইন প্রবর্তনের কারণগুলি হল—

  1. জাতীয় কংগ্রেসের প্রতিবাদ : আগেকার আইনগুলির মাধ্যমে আইন পরিষদে বেশি সংখ্যায় ভারতীয় সদস্যের প্রবেশের পটভূমি সুযোগ ছিল না। বেশি সংখ্যায় নির্বাচিত ভারতীয় সদস্য গ্রহণ এবং তাদের হাতে বেশি ক্ষমতা দেওয়ার দাবিতে ভারতের জাতীয় কংগ্রেস সোচ্চার হয়।
  2. বঙ্গ-বিরোধী আন্দোলন : ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলন তীব্রতা লাভ করলে সরকার বিপাকে পড়ে যায়।
  3. মুসলিম লিগের দাবি : ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে মুসলিম লিগের প্রতিষ্ঠা হয়। মুসলিম লিগের নেতৃবৃন্দ সরকারের কাছে তাদের সদস্যদের পৃথক নির্বাচনের দাবি জানায়।
  4. ব্রিটিশ সরকার উক্ত পরিস্থিতির মোকাবিলায় ও জাতীয় আন্দোলনকে দুর্বল করার উদ্দেশ্যে ভারত-সচিব জন মর্লে এবং বড়োলাট লর্ড মিন্টো একটি শাসনসংস্কারের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে প্রবর্তিত এই শাসনসংস্কার মর্লে-মিন্টো শাসন সংস্কার বা ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দের কাউন্সিল আইন নামে পরিচিত।
আরো পড়ুন :  লক্ষ্ণৌ চুক্তির শর্তাবলি উল্লেখ করো এই চুক্তির গুরুত্ব সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা কর

আইনের বিভিন্ন দিক

এই সংস্কার আইনের প্রধান দুটি দিক হল—1. কার্যনির্বাহক পরিষদ (Executive Council) ও 2. আইন পরিষদ (Legislative Council) গঠন।

  1. কাৰ্যনিৰ্বাহক পরিষদ : (১) বড়োলাটের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহক পরিষদ এবং প্রতিটি প্রাদেশিক পরিষদে একজন করে ভারতীয় প্রতিনিধি গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরিষদের প্রথম ভারতীয় সদস্য হিসেবে নিযুক্ত হন সত্যেন্দ্রপ্রসন্ন সিংহ (লর্ড সিনহা)। (২) বাংলা, বোম্বাই, মাদ্রাজ প্রভৃতি প্রদেশের গভর্নরের কার্যনির্বাহক পরিষদের সদস্যসংখ্যা ২ জন থেকে বাড়িয়ে ৪ জন করা হয়।
  2. আইন পরিষদ : (১)  কেন্দ্রীয় আইন পরিষদের সদস্যসংখ্যা ১৬ থেকে বাড়িয়ে ৬০ জন করা হয়। (২) আইন পরিষদ দেশের সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে আলোচনা ও সুপারিশ করার ক্ষমতা পায়। (৩) মুসলিম সম্প্রদায়কে পৃথকভাবে সদস্য নির্বাচনের অধিকার দেওয়া হয়। (৪) গভর্নর-জেনারেল ও প্রাদেশিক গভর্নরগণ তাঁদের অপছন্দের যে-কোনো সদস্যকে আইন পরিষদ থেকে অপসারণের অধিকার পান।
আরো পড়ুন :  লক্ষ্ণৌ চুক্তির শর্তাবলি উল্লেখ করো এই চুক্তির গুরুত্ব সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা কর

ত্রুটি ও সমালোচনা

বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দের মর্লে-মিন্টো আইন বা কাউন্সিল আইনের সমালোচনা করা হয়ে থাকে, যেমন–

  1. অনধিকার : দেশীয় রাজ্য, সামরিক বিভাগ, বৈদেশিক নীতি প্রভৃতি বিষয়ে কোনো প্রস্তাব আনার অধিকার আইনসভার ছিল না।
  2. দায়িত্বশীল শাসনব্যবস্থার অভাব : এই আইনের দ্বারা ভারতবর্ষে কোনো দায়িত্বশীল শাসনব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়নি।
  3. নির্বাচিত প্রতিনিধিদের গুরুত্বহীনতা : জনগণের দ্বারা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কোনো ক্ষমতা বা তাঁদের মতামতের আদৌ কোনো গুরুত্ব ছিল না।
  4. বড়োলাটের চূড়ান্ত ক্ষমতা : মর্লে-মিন্টো আইনের মাধ্যমে বড়োলাট আইনসভার যে-কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ, সংশোধন বা বাতিল করার অধিকারী ছিলেন।
  5. সাম্প্রদায়িক নির্বাচন : এই আইনের দ্বারা মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য পৃথক নির্বাচনের ব্যবস্থা করে সরকার সাম্প্রদায়িকতাকে ইন্ধন দেয়। ঐতিহাসিক পার্সিভ্যাল স্পিয়ার মর্লে-মিন্টো সংস্কার আইনকে ‘পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠনের প্রথম সরকারি উদ্যোগ’ বলে অভিহিত করেছেন।
আরো পড়ুন :  লক্ষ্ণৌ চুক্তির শর্তাবলি উল্লেখ করো এই চুক্তির গুরুত্ব সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা কর

গুরুত্ব

বিভিন্ন ত্রুটিবিচ্যুতি সত্ত্বেও ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দের মর্লে-মিন্টো সংস্কার আইনের বিভিন্ন গুরুত্ব ছিল। এই গুরুত্বগুলি হল–

  1. বেসরকারি সদস্যসংখ্যা বৃদ্ধি : এই আইনের দ্বারাই ভারতে প্রথম কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক আইনসভাগুলিতে বেসরকারি সদস্যের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়।
  2. স্বায়ত্তশাসনের সোপান : এই আইনের দ্বারা ভারতে স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়েছিল।

দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস সূচিপত্র

[maxbutton name=”দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাসের সূচিপত্র”]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!