Menu

ঔপনিবেশিকতাবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ সম্পর্কে হবসন-লেনিনের থিসিস বা তত্ত্ব ব্যাখ্যা

ঔপনিবেশিকতাবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ সম্পর্কে হবসন-লেনিনের থিসিস বা তত্ত্ব ব্যাখ্যা [২০১৫/২০১৭/২০২০]

সূচনা

আধুনিক বিশ্বে সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলি অর্থনৈতিক দিক থেকে অনগ্রসর বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল করতে সমর্থ হয়েছে, যা ‘ঔপনিবেশিকতাবাদ’ নামে পরিচিত। ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দের পরবর্তীকালে সাম্রাজ্যবাদের উদ্যোগ যথেষ্ট বুদ্ধি পেয়েছে। সাম্রাজ্যবাদ ও ঔপনিবেশিকতাবাদের অর্থনৈতিক ব্যাখ্যাদাতাদের মধ্যে সর্বাধিক অগ্রগণ্য হলেন জে. এ. হবসন এবং ভি আই লেনিন। এই সম্পর্কে তাঁদের অর্থনৈতিক ব্যাখ্যা ‘হবসন-লেনিন থিসিস’ (Hobson-Lenin thesis) নামে পরিচিত।

হবসনের ব্যাখ্যা

জে.এ. হবসন একজন ব্রিটিশ অর্থনীতিবিদ। সাম্রাজ্যবাদ ও ঔপনিবেশিকতাবাদের অর্থনৈতিক ব্যাখ্যা তিনি দিয়েছেন। ‘সাম্রাজ্যবাদ-একটি সমীক্ষা’ (Imperialism: A Study) গ্রন্থে তাঁর মূল বক্তব্য সম্বন্ধে জানা যায়। হবসনের অর্থনৈতিক ব্যাখ্যার প্রধান প্রতিপাদ্য বিষয়গুলি নিম্নরূপ:

[ক] উদ্‌বৃত্ত পুঁজির সৃষ্টি:

ধনতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় পুঁজিপতি মালিকদের হাতে বাণিজ্যের মাধ্যমে প্রচুর মুলধন সঞ্চিত হয়। ইউরোপের পুঁজিপতিরা এশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কাঁচামাল সংগ্রহ করে নিজেদের দেশে শিল্পের প্রসার ঘটাত এবং উৎপাদিত শিল্পদ্রব্য অনুন্নত দেশগুলিতে বিক্রি করে প্রচুর মুনাফা অর্জন করত।

আরো পড়ুন :  ঔপনিবেশিক শাসন প্রতিষ্ঠার ফলাফল আলোচনা কর

[খ] পুঁজিপতিদের চাপ:

‘বাড়তি মূলধনের চাপ’ই সাম্রাজ্যবাদ বা উপনিবেশ দখলের মূল কারণ। পুঁজিপতি শ্রেণি তাদের উর্দুবৃত্ত মুলধন উপনিবেশে বিনিয়োগ করে আর মুনাফা অর পরিকল্পনা করে। এজন্য তারা নিজ নিজ দেশের সরকারকে চাপ দিয়ে উপনিবেশ দখলে বাধ্য করে।

[গ] শোষণ:

পুঁজিপতি শ্রেণির অন্যতম লক্ষ্য ছিল অধিক মুনাফা ও সম্পদ অর্জন। এই লোভে তারা সস্তায় কাঁচামাল সংগ্রহ, উচ্চমূল্যে পণ্য বিক্রির বাজার দখল প্রভৃতির জন্য ইউরোপের বাইরে এশিয়া ও আফ্রিকায় নিজেদের রাজনৈতিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তারা নিজ দেশের ঔপনিবেশিক শাসন প্রতিষ্ঠা করে।

[ঘ] ঔপনিবেশিকতা অবসানের উপায়:

হবসন বলেন যে, সম্পদের সুষম বণ্টন ও অভ্যন্তরীণ সামাজিক সংস্কারের মাধ্যমে এর সমাধান হতে পারে। তিনি পুঁজিপতিদের বাড়তি মূলধন দরিদ্র শ্রেণির মানুষের মধ্যে বিতরণ এবং বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যে তা ব্যবহারের কথা বলেন। মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত হলে তারা কলকারখানায় উৎপাদিত উদ্বৃত্ত শিল্পসামগ্রী কিনে ব্যবহার করতে পারবে। এর ফলে উদ্বৃত্ত পণ্যসামগ্রী বিক্রির জন্য আর উপনিবেশ দখলের প্রয়োজন হবে না।

আরো পড়ুন :  ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রে জাতি-প্রশ্নের সদর্থক ও নঞর্থক প্রভাবগুলি কী ছিল

লেনিনের ব্যাখ্যা

বিখ্যাত রুশ কমিউনিস্ট নেতা ভি আই লেনিন সাম্রাজ্যবাদ ও ঔপনিবেশিকতাবাদের প্রসারে অর্থনৈতিক ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি সাম্রাজ্যবাদ সম্পর্কে বিশদভাবে ব্যাখ্যা করেছেন ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত তাঁর ‘Imperialism : the Highest Stage of Capitalism গ্রন্থে।

[ক] পুঁজির উদ্ভব:

শিল্পের অগ্রগতির ফলে ইউরোপের দেশগুলির মুষ্টিমেয় পুঁজিপতিদের হাতে বিপুল পরিমাণ পুঁজি সঞ্চিত হয়। এই পরিস্থিতিতে পুঁজিবাদী দেশগুলি ইউরোপের বাইরে নতুন উপনিবেশের প্রসার ঘটিয়ে সেখানে উদ্বৃত্ত পুঁজি বিনিয়োগের বিভিন্ন ক্ষেত্র প্রতিষ্ঠা করার বিষয়ে সক্রিয় হয়ে ওঠে।

[খ] বাজার দখল ও কাঁচামাল সংগ্রহ:

লেনিনের মতে,  পুঁজিবাদের জঠরে সাম্রাজ্যবাদের জন্ম। বেশি মুনাফা লাভের আশায় দেশের প্রয়োজনের চেয়ে বেশি পণ্যসামগ্রী উৎপাদন করে। প্রয়োজনের অতিরিক্ত এই পণ্য বিক্রি এবং শিল্পোৎপাদনের জন্য সস্তায় কাচামাল সংগ্রহের উদ্দেশ্যে পুঁজিবাদী গুলি উপনিবেশ দখলের চেষ্টা চালায়।

[গ] প্রতিদ্বন্দ্বিতা:

বিভিন্ন পুঁজিবাদী রাষ্ট্র উপনিবেশ দখলের উদ্যোগ নিলেও উপনিবেশের সংখ্যা ছিল সীমিত। পরবর্তীকালে উপনিবেশ দখলকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন পুঁজিবাদী সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রের মধ্যে কাড়াকাড়ি অর্থাৎ প্রতিযোগিতা হয়ে যায়। এই প্রতিযোগিতার পরিণতি হল যুদ্ধ। লেনিনের মতে, পুঁজিবাদী অর্থনীতি হল যুদ্ধের জন্মদাতা।

আরো পড়ুন :  হবসন-লেনিন থিসিসের সীমাবদ্ধতা উল্লেখ কর | এই তত্ত্বের গুরুত্ব লেখ

[ঘ] শ্রমিক শ্রেণির প্রতিষ্ঠা:

ইউরোপের পুঁজিপতি শ্রেণি এশিয়া ও আফ্রিকার অনুন্নত অঞ্চলগুলিকে বেছে নিয়ে সেখানে পুঁজি বিনিয়োগ করে এবং সেখানকার নতুন শ্রমিক শ্রেণির ওপর সীমাহীন শোষণ চালায়। এর পুঁজিপতিরা যে বিপুল পরিমাণ মুনাফা লাভ করে তার একটি ক্ষুদ্র অংশ নিজ দেশের শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে খরচ করে তাদের বশীভূত করে। এর মাধ্যমে তারা নিজেদের অনুগত একধরনের অভিজাত শ্রমিক শ্রেণি তৈরি করে।

দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাসের সূচিপত্র

ঔপনিবেশিকতাবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ অধ্যায়ের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!