Menu

ডিরোজিওর নব্যবঙ্গ আন্দোলনের পরিচয় দাও এই আন্দোলনের সীমাবদ্ধতা বা ব্যর্থতা আলোচনা কর

Last Updated on December 26, 2022 by বাংলা মাস্টার

ডিরোজিওর নব্যবঙ্গ আন্দোলনের পরিচয় দাও এই আন্দোলনের সীমাবদ্ধতা বা ব্যর্থতা আলোচনা কর

                             

নব্যবঙ্গ আন্দোলন

উনিশ শতকে সাংস্কৃতিক আন্দোলনের ইতিহাসে যারা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন হিন্দু কলেজের তরুণ শিক্ষক হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিও (১৮০৯-১৮৩১ খ্রি.) এবং তাঁর নেতৃত্বে গড়ে ওঠা নব্যবঙ্গ বা ইয়ং বেঙ্গল (Young Bengal) দল।

(১) নব্যবঙ্গ আন্দোলন কী

ডিরোজিওর নেতৃত্বে তাঁর অনুগামী তরুণরা সামাজিক কুসংস্কারগুলির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। তাঁদের আন্দোলন ‘নব্যবঙ্গ আন্দোলন’ (Young Bengal Movement) নামে পরিচিত। এই নব্যবঙ্গ আন্দোলনের প্রাণপুরুষ ছিলেন ডিরোজিও।

(২) সংস্কারমূলক কর্মসূচি

হিন্দু কলেজের তরুণ শিক্ষক ডিরোজিও তাঁর অনুগামীদের প্রতি গভীর প্রভাব বিস্তার করেছিলেন। ১৮২৮ সালে তিনি কলকাতায় স্থাপন করেন ‘অ্যাকাডেমিক অ্যাসোসিয়েশন’। এই বিতর্ক সভায় সমাজে প্রচলিত নানা কুসংস্কারগুলি সম্বন্ধে মতামত প্রকাশ করা হতো। জাতিভেদপ্রথা, মূর্তিপূজা, অস্পৃশ্যতা প্রভৃতি বিষয় ছিল অন্যতম। ‘এথেনিয়াম’, ‘পার্থেনন’ প্রভৃতি পত্রিকার মাধ্যমে সামাজিক অন্যায়ের বিরুদ্ধে তিনি সোচ্চার হতেন। তাছাড়া ডিরোজিও-র বিভিন্ন রচনায় ভারতের প্রতি গভীর দেশপ্রেমের পরিচয় পাওয়া যায়। তাঁর রচিত উল্লেখযোগ্য রচনা হলো—‘ফকির অব জঙ্ঘিরা’ এবং ‘To India—My Native Land’.

আরো পড়ুন :  সমাজ সংস্কার আন্দোলনে ব্রিটিশ সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ লেখ সংস্কার আন্দোলনের প্রভাব আলোচনা কর

(৩) ডিরোজিওর অনুগামীদের আন্দোলন

ডিরোজিও মৃত্যুর পর তাঁর আন্দোলনকে সচল রেখেছিল তাঁর অনুগামীরা। তাঁর অনুগামীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকজন হলেন—কৃষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়, প্যারীচাঁদ মিত্র, রামতনু লাহিড়ি, দক্ষিণারঞ্জন মুখোপাধ্যায়, রসিককৃষ্ণ মল্লিক প্রমুখ। ডিরোজিও-র অনুগামীরাই ‘নব্যবঙ্গ গোষ্ঠী’ নামে অভিহিত হয়। এঁরা হিন্দু ধর্মের রক্ষণশীলতাকে তীব্রভাবে আক্রমণ করতো। নিষিদ্ধ মাংস ভক্ষণের পাশাপাশি ব্রাহ্মণদের নানাভাবে উত্যক্ত করতো। ডিরোজিওর অনুগামীরা ‘জ্ঞানান্বেষণ’, ‘এনকোয়ারার’, ‘বেঙ্গল স্পেকটেটর’, ‘হিন্দু পাইওনিয়র’ প্রভৃতি পত্রিকার মাধ্যমে নিজেদের মতাদর্শ প্রকাশ করতেন। তাঁরা বিভিন্ন কুপ্রথা ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানান। খ্রিস্টান পাদরিদের গোঁড়ামি, স্ত্রীপুরুষের মধ্যে সমতাহীনতা, দাসপ্রথা, নারীনির্যাতন, সংবাদপত্রের নিয়ন্ত্রণবিধি, ভারতীয় বিচার ও পুলিশ ব্যবস্থা, বেগার খাটানো ও অন্যান্য বিষয়ের অন্যায় ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে তাঁরা সোচ্চার ছিলেন।

আরো পড়ুন :  বাংলার নবজাগরণ বিষয়ে বিতর্ক এবং ইতালির নবজাগরণের সঙ্গে এর তফাৎ আলোচনা কর

সীমাবদ্ধতা বা ব্যর্থতা

ইয়ং বেঙ্গল আন্দোলন শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়। এই ব্যর্থতার নানা কারণ ছিল। যেমন—

(১) নেতিবাচক কর্মসূচি

ইয়ং বেঙ্গল আন্দোলনের কোনো গঠনমূলক কর্মসূচি ছিল না। হিন্দুধর্ম বা পাশ্চাত্য সভ্যতা কোনোটি সম্পর্কেই তাঁদের কোনো স্বচ্ছ ধারণা ছিল না। হিন্দুধর্ম সম্পর্কে সবকিছু না জেনেই তাঁরা এই ধর্মের নিন্দায় সোচ্চার হয়েছিলেন।

(২) শহরকেন্দ্রিকতা

দেশের সাধারণ মানুষের সঙ্গে ইয়ং বেঙ্গল আন্দোলনের কোনো যোগসূত্র ছিল না। কিছু শহুরে তরুণ বুদ্ধিজীবীর মধ্যেই এই আন্দোলন সীমাবদ্ধ ছিল।

(৩) দরিদ্রদের প্রতি উদাসীনতা

দেশের দুর্দশাগ্রস্ত কৃষক ও শ্রমজীবী মানুষের জন্য তাঁরা কোনো চিন্তাভাবনা করেননি।

(৪) মুসলিম-যোগের অভাব

ইয়ং বেঙ্গল আন্দোলনের যাবতীয় কর্মপ্রয়াস পরিচালিত হয়েছিল হিন্দুধর্মকে কেন্দ্র করে। মুসলিম সমাজের সঙ্গে ইয়ং বেঙ্গল আন্দোলনের কোনো যোগ ছিল না।

আরো পড়ুন :  সমাজসংস্কারে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অবদান লেখ

মূল্যায়ন

ইয়ং বেঙ্গল আন্দোলনের কাজকর্মের মূল্যায়ন প্রসঙ্গে নানা মত লক্ষ করা যায়। অনেকে তাঁদের সম্পর্কে ‘উচ্ছৃঙ্খল’ প্রভৃতি নিন্দাসূচক মন্তব্য করেছেন। আবার অনেকে তাঁদের মধ্যে ‘নবজাগরণের ঊষালগ্ন’ দেখতে পেয়েছেন। কেঊ বলেছেন, “ভ্রান্ত পুথিপড়া বুদ্ধিজীবী”। তবে সার্বিকভাবে এই আন্দোলনের অবদান কখনোই অস্বীকার করা যায় না।

দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাসের সূচিপত্র

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!